রবের সঙ্গে একান্তে কথা বলার অন্যতম মুহূর্ত নামাজ। নামাজ বান্দা ও আল্লাহ তায়ালার মাঝে এক ধরনের বন্ধন তৈরি করে। নামাজের সময় মানুষ যতটা আল্লাহর নিকটবর্তী থাকে অন্য কোনো সময়ে এতোটা কাছে থাকে না। এ সময় মানুষ দুনিয়ার সব কিছু থেকে পৃথক হয়ে আল্লাহর সামনে নিজেকে সপে দেয়। আল্লাহ তায়ালাই তার অন্তরের ভেতরে থাকেন।
তবে আল্লাহ ও মানুষের একান্ত এই মুহূর্তটিতে বিঘ্নতা সৃষ্টির চেষ্টা চালিয়ে যায় শয়তান। শয়তান কখনোই চায় না বান্দা ও তার রবের মাঝে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি হোক। মানুষ তার রবের দিকে ঝুঁকুক এবং মনোযোগী হয়ে ইবাদত করুক।
আল্লাহর দরবার থেকে বিতাড়িত হওয়ার সময়েই শয়তান এই প্রতিঙ্গা করেছিল। পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে—
সে বলল, হে আমার প্রতিপালক! আপনি আমাকে অবকাশ দিন পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত। তিনি বললেন, তুমি অবকাশ প্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত হলে অবধারিত সময় উপস্থিত হওয়ার দিন পর্যন্ত। সে বলল, আপনার সম্মানের শপথ! আমি তাদের সকলকেই পথভ্রষ্ট করব। তবে তাদের মধ্যে একনিষ্ঠ বান্দাদের নয়। তিনি বললেন, তবে এটাই সত্য আর আমি সত্যই বলি। তোমার দ্বারা ও তোমার অনুসারীদের দ্বারা আমি জাহান্নাম পূর্ণ করবই।’ (সূরা সোয়াদ, আয়াত : ৭৯-৮০)
মানুষকে বিপথগামী করার শপথ পূরণ করতে শয়তান প্রতি মুহূর্তে ইবাদতে বিঘ্নতা সৃষ্টির চেষ্টা করে। মানুষ যখন নামাজে দাঁড়ায় তখন তাকে বিভিন্ন ধরনের কথা মনে করিয়ে দেয়। এ বিষয়ে এক হাদিসে হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন—
যখন নামাজের জন্য আজান দেওয়া হয়, তখন শয়তান হাওয়া ছেড়ে পলায়ন করে, যাতে সে আজানের শব্দ না শোনে। যখন আজান শেষ হয়ে যায়, তখন সে আবার ফিরে আসে। আবার যখন নামাজের জন্য ইকামত বলা হয়, তখন আবার দূরে সরে যায়। ইকামত শেষ হলে সে পুনরায় ফিরে এসে লোকের মনে কুমন্ত্রণা দেয় এবং বলে এটা স্মরণ করো, ওটা স্মরণ করো, বিস্মৃত বিষয়গুলো সে মনে করিয়ে দেয়। এভাবে লোকটি এমন পর্যায়ে পোঁছে যে, সে কয় রাকাত নামাজ আদায় করেছে তা মনে করতে পারে না। (বুখারি, হাদিস : ৬০৮)
নামাজ শুরুর পর শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে রক্ষা পেতে কিছু কাজ করা যেতে পারে। এতে করে ওয়াসওয়াসা থেকে মুক্ত হয়ে মনোযোগসহ নামাজ আদায় করা সহজ হবে।
নামাজের পুরোটা সময় অন্তরে নামাজের কথার উপস্থিতি ও স্থিরতা রাখতে হবে। বিশুদ্ধ উচ্চারণে তাসবিহ ও সূরা পড়ার চেষ্টা করতে হবে। আল্লাহ প্রতি ভীত হয়ে নামাজে দাঁড়াতে হবে, নামাজ চলাকালে আল্লাহকে আরও বেশি ভয় করতে হবে।
এই নামাজই আমার জীবনের শেষ নামাজ অন্তরে এমন বিশ্বাস রাখতে হবে। এবং নামাজের মাধ্যমে কল্যাণ আশা করতে হবে। নামাজের আগে নিজের গুনাহর কথা চিন্তা করতে হবে তাহলে অন্যান্য বাজে চিন্তা মন থেকে দূরে সরে যাবে।