হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হলো মাত্র ৮ বছর বয়সী এক কন্যাশিশুর। গত ১০ জানুয়ারি ঘটনাটি ঘটেছে গুজরাটের আহমেদাবাদে। গোটা ঘটনার ভিডিও সোশাল মিডিয়ায় প্রকাশ্যে এসেছে। যেখানে দেখা গেছে, স্কুলের মধ্যেই বুকে যন্ত্রণা নিয়ে চেয়ারে বসে ছিল ওই কন্যাশিশু। হঠাৎ চেয়ার থেকে গড়িয়ে পড়ে সে। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত বলে ঘোষণা করে।
স্কুলের পক্ষ থেকে জানা গেছে, অন্যান্য দিনের মতো শুক্রবার সকাল ৮টায় স্কুলে এসেছিল ওই বালিকা। সিঁড়ি দিয়ে ওপরে ওঠার সময় বুকে তীব্র ব্যাথা অনুভব করে সে। যার জেরে স্কুলের লনে এক চেয়ারে বসে পড়ে। কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই চেয়ার থেকে গড়িয়ে পড়ে মৃত্যু হয় তার। স্কুলের প্রিন্সিপাল শর্মিষ্ঠা সিনহা জানান, ঘটনার পরই অ্যাম্বুল্যান্সে ফোন করা হয়। অ্যাম্বুল্যান্সে আসতে দেরি হওয়ায় স্কুলের গাড়িতে করে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে। যদিও চিকিৎসকরা তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। জানা গেছে, ওই বালিকার মা-বাবা মুম্বাইয়ের বাসিন্দা। আহমেদাবাদে দাদা-দাদী বাসায় থাকত সে।
এই ঘটনা অবশ্য প্রথমবার নয়, গত বৃহস্পতিবার একই ঘটনা ঘটেছিল কর্নাটকে। সেখানে চামরাজনগর জেলায় প্রায় একইরকম ঘটনা সামনে আসে। ৮ বছরের বালিকা তেজস্বিনী স্কুলে ক্লাস চলাকালীন শিক্ষিকাকে খাতা দেখাতে যাচ্ছিল। সেই সময় হঠাৎ মাথা ঘুরে পড়ে যায় সে। দেয়াল ধরে ফের ওঠার চেষ্টা করলেও উঠতে পারেনি। অজ্ঞান হয়ে যায় সেখানেই। তড়িঘড়ি তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসক মৃত বলে ঘোষণা করেন। এক্ষেত্রেও জানা যায়, মৃত্যুর কারণ হৃদরোগ। দেশের নানা প্রান্তে এত কম বয়সী শিশুদের এমন ভয়াবহ মৃত্যুতে স্বাভাবিকভাবেই উদ্বেগ বাড়ছে।
দূরত্ব বজায়ের পরামর্শ স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের
এত অল্প বয়সে এমন মৃত্যুর ঘটনায় চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, এই ঘটনা ব্যতিক্রমী হলেও একেবারেই বিরল নয়। শারীরিক জটিলতার কারণে কোনও কোনও ক্ষেত্রে শিশুদের হৃদপিণ্ডের পেশি ও দেয়াল অনেকটাই পুরু হয়ে যায়। পরিস্থিতি এতটাই গুরুতর হয় যে তা হৃদপিণ্ডে রক্তপ্রবাহে বাধা দিতে শুরু করে। বড়দের ক্ষেত্রে এমনটা প্রায়শই দেখা গেলেও শিশুদের ক্ষেত্রে তা অত্যন্ত কম। চিকিৎসকদের দাবি, ২ লাখ শিশুর মধ্যে একজনের ক্ষেত্রে এমনটা হয়। এর কিছু উপসর্গও রয়েছে। যেমন সদ্যজাতদের ক্ষেত্রে দুগ্ধপানে সমস্যা, শিশুর মধ্যে চঞ্চলতার অভাব, শিশুর অত্যধিক ঘাম হওয়া, বমি হওয়া, ক্লান্তি, ক্ষুধামন্দ, শরীরে ফ্যাকাশে ভাব ও শ্বাসকষ্ট। এই ধরনের লক্ষণ শিশুর মধ্যে দেখা দিলে অবিলম্বে চিকিৎসকের স্মরণাপন্ন হওয়া উচিত।
শিশুদের হার্ট অ্যাটাকের কারণ
আকস্মিক আঘাত: অনেক সময় শিশুদের বুকে আঘাতের কারণে হৃদযন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যার কারণে শরীরে রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। এ কারণে বাচ্চা কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট-এ আক্রান্ত হতে পারে।
পাশাপাশি অনেক সময় ঘুমন্ত অবস্থায় নবজাতক শিশুর মৃত্যু হয়। এর কারণ হলো ঘুমানোর সময় তার পাশ বদলানো এবং সে ক্ষেত্রে অনেকসময় শ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়া থেকেও হৃদযন্ত্রে চাপ হতে পারে।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি নবজাতক শিশুর ব্রঙ্কাইটিস বা নিউমোনিয়ার (শিশুদের হার্ট অ্যাটাকের কারণ) মতো রোগের ঝুঁকি থাকে তবে অভিভাবকদের সতর্ক করা উচিত। এমন অবস্থায় হঠাৎ করে শিশুদের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় হার্টের ওপর চাপ পড়ে। যার কারণে কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়।
জন্মগত রোগের কারণ জন্মের পর থেকেই কিছু শিশুর হৃদযন্ত্রে কিছু ঘাটতি থাকতে পারে। এই ধরনের শিশুদের শ্বাসযন্ত্রের রোগও হয়। এই অবস্থাকে জন্মগত হার্ট ডিফেক্ট বলা হয়। হার্টে এই ব্লকেজের কারণে হৃদযন্ত্র ঠিকমতো রক্ত সরবরাহ করতে পারে না, যা হার্ট অ্যাটাক বা কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের ঝুঁকি বাড়ায়।
হার্ট অ্যাটাকের ক্ষেত্রে কী করবেন যদি আপনার শিশুর শ্বাস-প্রশ্বাসে কোনও অসুবিধা হয়, তাহলে প্রথমে তাকে মাটিতে সোজা করে শুইয়ে তার বুকে দুই হাত রেখে তাকে সিপিআর দিন। অবিলম্বে একটি অ্যাম্বুলেন্স কল করুন এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করুন।
এর পাশাপাশি জোরে চিৎকার করে আপনার শিশুর সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করুন। সময়মতো করা এসব কাজ শিশুকে মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচাতে পারে।