প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদ সা.-এর শৈশব ছিল অনন্য শুদ্ধতায় পূর্ণ এবং মানবতার জন্য শিক্ষা ও অনুকরণীয় দৃষ্টান্তে ভরা। তাঁর শৈশবে খেলাধুলা ছিল নির্মল আনন্দের মাধ্যম। শুধু বিনোদনে সীমাবদ্ধ ছিল না; বরং তা ছিল শালীনতার পরিচায়ক, শারীরিক সক্ষমতার বিকাশ এবং নৈতিকতার এক বাস্তব চর্চা। বিশেষ করে, তাঁর বনু সাদ গোত্রে কাটানো দিনগুলো এই দিক থেকে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।
মা হালিমা সাদিয়া রা.-এর গৃহে নবীজির শৈশব
মক্কার রুক্ষ আবহাওয়া থেকে দূরে, বনু সাদ গোত্রের শান্ত প্রকৃতি, মরুর নির্মল পরিবেশে শৈশব কাটিয়েছেন শিশু মুহাম্মদ সা.। দুধ মা হালিমা সাদিয়া রা. তাঁকে নিজ সন্তানের মতো লালন-পালন করেছিলেন। তাঁর কাছে কাটানো আনন্দঘন, নির্মল শৈশব নবীজি সা.-এর ভবিষ্যৎ চরিত্র গঠনের শক্ত ভিত্তি তৈরি করে।
সঙ্গীদের সঙ্গে বকরির পাল চড়ানো
মরুভূমির প্রান্তরে তাঁর পালক ভাই-বোনদের সঙ্গে বকরির পাল চড়ানোর সময় নবীজি সা. নির্মল আনন্দে মেতে উঠতেন। সঙ্গীদের সঙ্গে দৌড়ানো, গাছের ছায়ায় গল্প বলা, কিংবা বকরির দেখভাল করার মধ্যেও তাঁর ভেতর ভিন্ন ধরনের আচরণ প্রকাশ পেত। তিনি কখনো খেলায় সীমা অতিক্রম করতেন না।
তাঁর সঙ্গে যারা খেলাধুলা করত, তারা বলত— মুহাম্মদ সা.-এর মধ্যে ছোটবেলা থেকেই এক ধরনের গাম্ভীর্য ছিল। তিনি কখনো কারো সঙ্গে ঝগড়া করতেন না, কখনো অন্য শিশুদের প্রতি রুক্ষ আচরণ করতেন না। তবুও তাঁর খেলা ছিল প্রাণবন্ত, শিশুদের মতোই সরল।
সাক্কে সাদরের ঘটনা : নির্মলতার প্রতীক
একদিন নবীজি সা. মরুভূমির প্রান্তরে সঙ্গীদের সঙ্গে খেলছিলেন। হঠাৎ জিবরাঈল আ. এসে তাঁর বুক চিরে হৃদয় থেকে এক কালো অংশ বের করে জমজমের পানিতে ধুয়ে যথাস্থানে রেখে দেন। জিবরাঈল আ. বলেছিলেন, ‘এটি ছিল শয়তানের প্রভাব। আমি তোমার হৃদয়কে সম্পূর্ণ নির্মল করে দিলাম।’
এই ঘটনা তাঁর জীবনের প্রথম সাক্কে সাদর বা হৃদয় পরিষ্কারের ঘটনা। (সহীহ মুসলিম, হাদিস : ২৩৬৬)
যে শিশুটি কিছুক্ষণ আগেও খেলায় ব্যস্ত ছিল, তার হৃদয় এখন পুরোপুরি পবিত্র। ফেরেশতাদের এই শুদ্ধিকরণ ছিল পৃথিবীতে তাঁর নবুওয়াতি জীবনের প্রথম প্রস্তুতি। এই ঘটনার পর হালিমা রা. এবং তাঁর স্বামী শঙ্কিত হয়ে পড়েন, তবে তাঁরা বুঝতে পারেন, এই শিশু অন্য সবার চেয়ে আলাদা।
শৈশবের খেলাধুলার শিক্ষা
নবীজি সা. -এর শৈশবের খেলাধুলা শুধু সময় কাটানোর জন্য ছিল না; বরং তা তাঁর নৈতিক শিক্ষা ও শারীরিক সক্ষমতা অর্জনের মাধ্যম ছিল। শিশুদের মধ্যে যখন প্রতিযোগিতা হতো, তিনি তাঁর সঙ্গীদের উৎসাহ দিতেন। বকরির পাল চড়ানোর সময় তিনি যেমন সতর্ক থাকতেন, তেমনি বন্ধুত্বের চর্চাও করতেন।
সূত্র : সহিহ মুসলিম, আর-রাহীকুল মাখতুম, সীরাতে খাতিমুল আম্বিয়া, সীরাতে ইবনে হিশাম